ক্রান্তিকাল
এক অদ্ভুত যন্ত্রণা, যার কোনো ব্যাখ্যা হয় না, এবং যার কোনো পরিচিত ওষুধও নেই - সেই যন্ত্রণার মত মারণরোগ বোধহয় আর নেই।
রোগেভোগে মরে যাওয়া অনেক সহজ। ভেতরে ভেতরে মরে যাওয়ার মত দুঃখ আর কিছুতে নেই।
যখন নেরুদা ছুঁয়ে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, কেউ কাউকে ছেড়ে যাব না - ভাবিনি, কেবল একপক্ষই সেই কথা রাখবে। দূরত্ব বাড়বে, যন্ত্রণা বাড়বে, প্রত্যেকটা রাত বেদনার্ত হতে হতে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে, আর দূর থেকে মুচকি হেসে সম্রাট নিরো তার বেহালাটা তুলে নেবে।
তোমার জানা নেই হয়তো, বেহালাও কাঁদে। ছড়ের টানে নয়, দুঃখে। যন্ত্রণায়। বুকের ভেতরে যে অব্যক্ত ব্যথা কুরে কুরে খেতে থাকে, সেই যন্ত্রণার মূর্ছনায় বেহালাও আর্তনাদ করে ওঠে, আর আমরা ভাবি বাখ।
চলে যাওয়া বড়ই সহজ। থাকতে গেলে অনেক কষ্ট করতে হয়। আমরা সবসময়েই সহজ বিকল্পকে বেছে নিই। সময় বাঁচাতে।
প্রত্যেকটা রাত্রি মলম হয়ে উঠতে চায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে চায়। পারে না। প্রত্যেকটা রাত্রি জানে, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
থেকে গেলে পারতে হয়তো। স্কেল দিয়ে যে দূরত্ব মাপা যায় না, সেই দূরত্বের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আবছা সিল্যুয়েটসম বিলীন হয়ে না গিয়ে, এই দীর্ঘ ছায়াপথটা হেঁটে আসতে পারতে।
আবার হয়তো কোনোদিন একসাথে নেরুদা পড়ব আমরা। আবার হয়তো কোনো এক কালবোশেখী সন্ধ্যের হাল্কা শীতকে হার মানিয়ে দেবে দুজোড়া হাতের মধ্যবর্তী উষ্ণতা। ব্যর্থ আস্ফালনে বেহালা ছুঁড়ে ফেলে দেবেন নিরো, আর অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে মহাকাল মুচকি হাসবে। হয়তো তুমি চেষ্টা করবে, এই সুদীর্ঘ ছায়াপথটা হেঁটে পার হওয়ার। কিন্তু ততদিনে সব ঝাপসা হয়ে যাবে। কিছু অস্ফুট, অনুচ্চারিত কথা, কিছু অভিমান, কিছু দুঃখ, কিছু অব্যক্ত যন্ত্রণা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামাবে।
'এমন বৃষ্টির দিন পথে পথে
আমার মৃত্যুর দিন মনে পড়ে।'
কখনো কখনো রক্তক্ষরণ ও দরকার হয়। আর কিছুর জন্য না হোক, এমন কটি লাইনের জন্য।
ReplyDelete:)
Delete