পড়শিচরিত

 আমাদের একজন প্রতিবেশি আছে। না, সবারই প্রতিবেশি থাকে। আমি শশী কাপুর নই। এখানে দয়া করে 'সবারই তো ঘর রয়েছে..' ইত্যাদি গাইতে বসবেন না। এর ব্যাপার আলাদা। এ আমাদের প্রতিবেশি হলেও এর প্রতি আমাদের বেশি ভালোবাসা নেই(এবং উল্টোটা)।

প্রতিবেশী আদতে বিহারি খোট্টা। কে না জানে, কিছু উদাহরণ বাদে এই প্রজাতির বাকি প্রায় সব প্রোডাক্টই 'আ, মরণ!'(সতর্কীকরণ - 'খোট্টা' সম্প্রদায়ের থেকেও বেশি একটি মেন্টালিটি, একটি স্বভাব। সে আদতে বাংলা, বিহার, কর্ণাটক এমনকি মঙ্গলগ্রহের প্রাণীও হতে পারে। কেউ মনে করবেন না 'খোট্টা মাত্রেই বিহারি' গোছের সমীকরণ টানা হচ্ছে এবং বিহারিদের কোনোভাবে ছোটো করা হচ্ছে। ধন্যবাদ) এও এদের জাতভাইদের সুনাম অটুট রেখেছে, মানে টুটতে দেয় না, বরং পাশের বাড়ির(মানে আমাদের) শান্তি টুটিয়ে ও ছুটিয়ে দেয়। খোট্টাভাইয়ের দুই বৌ ও এক ছেলে... থুড়ি, দুই ছেলে ও এক বৌ আছে। তারা সবাই খোট্টা, এবং সেই শিবা মহাশয় কথিত আঙুরের মতোই, অতিশয় খাট্টা-ও। খাট্টা দেখলেই আমার আবার গাঁট্টা মারতে ইচ্ছে করে, কিন্তু নিজেকে সংবরণ করতে হয়, কারণ সেটা ঠাট্টার ব্যাপার নয়। খোট্টা লোকটি নিজের মাইনের পুরো টাকা ফ্রডকে দেয়(ফিশিং), এত ব্রড মন ওর। খোট্টার ছেলেরা পড়াশুনো করে না, শুধু দৌড়ে বেড়ায়। বাচ্চা না শুয়োরের বাচ্চা, খোদায় মালুম। খোট্টার বৌ ছেলে দেখলে গান গায়, আর সেই শুনে আমাদের কান যায়। এসব সত্ত্বেও আমরা খোট্টার অত্যাচার মেনে নিয়ে ছিলাম। কিন্তু তাতে খোট্টার মন মেনে নিল না।

খোট্টারা দ্বিজের (মানে দুজনের, বামুনের কিছু নেই এতে)কে সহজেই নিজের করে নিয়েছে। মানে আমাদের যেটা কমন প্যাসেজ, তাতে তারা মন দিয়ে কাপড় মেলে। ক মণ কাপড় মন দিয়ে কমন প্যাসেজে মেলা যায়, তা জানিনে, কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও কমনীয় নয়, রমণীয় তো নয়ই, বরং এই কোরোনাকালে বাইরে কাপড় মেলাটা কেমন শমনীয় মনে হয়, মানে যা শমনের কাছ থেকে শমন এনে দেবে। বমনীয়ও বলা চলে, কারণ সেই কাপড় থেকে প্রবল বাজে গন্ধ বেরোয় এবং তারা একটুও দমনীয় নয়। খোট্টা বাচ্চাদুটোর বয়স যথাক্রমে আট ও চার, কিন্তু তারা নাকি বিছানা শুকনো রাখতে নাচার। চার হয়েও নাচার এবং আট হয়েও ভেজায় খাট, এ জ্বালা শালা আনজনেও বোঝে না, দেখে চোখে আঞ্জনী হয়ে যায়। এবার তাদের খোট্টা বাবা ও খোট্টামা মোট্টা করে কাপড় মেলে সেই কোট্টায়(মানে কোটা আরকি)। এবার, সেই সুযোগে তারা শাড়ি লুঙ্গি সায়া বেহায়া হয়ে মেলে যায়। খোট্টা বাচ্চাদের এতকিছু পরিধান অভিধানবিরুদ্ধ বলেই মনে হয়। এর বিরুদ্ধে আমরা অনুরোধ করি কাপড় না মেলার। তারা সেই অনুরোধকে ভাবে খেলার, দিয়ে তোয়াক্কা না করে আরো মেলে যায়। আমরা চিঠি দিই কমিটিকে। কিন্তু কমিটি কবেই বা কী মিটিয়েছে? মিটিয়ে উঠতে পারে না বলেই একে কমিটি বলে। যাইহোক, এই সন্দেশ পেয়ে খোট্টা আমাদের দরজায় এসে(সন্দেশ না এনেই) পদাঘাত করে এবং আমাদের শাসিয়ে যায়। প্রতিবেশি হয়েও সে বলে আমাদের প্রতি বাঁশ দিয়ে দেবে। প্রতিবেশির অর্থ যে প্রতি বাঁশি, মানে সবার প্রতি বাঁশির মতোই বাজাই যে তার কাজ, সেটা শিব্রাম বাবু বলেছিলেন; নিজের দরজায় দড়াম পড়ার পর সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝলাম। আমরা পুলিশটুলিশকে জানাই। সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু হয়। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত দরকারি না হলে তা ছোটোগল্প হয়ে যায়, মানে শেষ থাকে না। ব্যাপারটা সেরকম জায়গাতেই আছে আরকী। আমাদেরও নাকি হবে, কে জানে বাবা কবে! আপাতত খোট্টারা প্রাণপণে কাপড় মেলে চলেছে। খোট্টার একবার কোরোনাও হয়ে গেছে, খোট্টাদের বাচ্চাগুলো মুখে মাস্ক না পরেই দৌড়ে বেড়ায় হারেরেরে করে। কোর্টের শমন না উপরের শমন, কে আগে আসবে, বুঝছি না। লালন বলেছিলেন, পড়শি যদি আমায় ছুঁত, আমার যমযাতনা যেত দূরে। এ পড়শি আমাকে ছুঁলে যম এসে আমার সব যাতনা ঘুচিয়ে দেবে। ভগমান, দেখে রেখো। এ খোট্টাফ্ল্যাট আমার ফ্ল্যাট নয়।

Comments

Popular Posts