ঠিকানাহীন চিঠি - ৬
প্রিয়তমা,
উৎসবের মরশুম শেষ। চারিদিকে জুড়ে শুধু শ্মশানের বিষণ্ণতা। বেদনার্ত, ভারাক্রান্ত হৃদয়গুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে যে যার কাজে ফিরে যাওয়ার। সামনের সপ্তাহ থেকে আবার যে-কে-সেই। আবার সেই ব্যস্ত স্কেজ্যুউল, পড়াশোনার চাপ, অফিসে বসের ধাতানি....
জানো, বিষণ্ণতার কথা বলতেই তোমার মুখটা ভেসে ওঠে আমার কাছে, যে মুখটার দিকে এখন আর সোজাসুজি তাকাতে পারি না। 'ফেক'বুকের ফেক প্রোফাইল থেকেই দেখতে হয় তোমাকে। দেখি, তুমি ভালোই আছো। দিব্য কন্দর্পকান্তি এক যোগ্য প্রেমিকও জুটেছে তোমার। তুমি ভালোই আছো।
তুমি ভালো থাকলে আমিও থাকব, এমনটাই কথা ছিলো বোধহয়। কিন্তু, তেমনটা হল আর কই? তোমার পাশে এখনো যে অন্য কাউকে দেখতে পারি না! হয়তো পারবও না কোনোদিন। কিন্তু, এটাই যে নিয়তি, বলো?
তোমাকে লেখা একটা চিঠিতে একবার বুদ্ধদেব গুহর একটা উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলাম, 'আমার অশেষ আর্তি যেন তার সুখকে কখনো বিঘ্নিত না করে।', মনে আছে? হয়তো এটা হলেই ভালো হত, জানো। তবুও, পারি না। আমার মতো নাস্তিকও মাঝেমধ্যে প্রবল আস্তিক্যবাদী হয়ে উঠতে চায়, তুমি আবার ফিরে আসবে, এই আশায়।
তোমার মনে পড়ে, একসাথে ভোরের মহাত্মা গান্ধী রোড দিয়ে পথ হাঁটতাম আমরা? বৃষ্টি নামলেও আমি ইচ্ছে করে ছাতা বের করতাম না, তোমার সাথে এক ছাতায় হাঁটতে পারব বলে। কলেজ স্ট্রীট-এমজির বৃষ্টিকে সবাই ভয় পায়, কিন্তু ঈশ্বর জানেন, কীভাবে আমি চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করে থাকতাম সেই বৃষ্টির জন্য। 'ইজাজত' সিনেমার সেই বিখ্যাত গানের লাইনের মতই, আধা-ভিজে আধা-শুকনো আমরা গল্প করতে করতে এগিয়ে যেতাম কলেজের দিকে। আচ্ছা, তুমি এখনো সেভাবে বৃষ্টিতে ভেজো তোমার বর্তমান প্রেমিকের সঙ্গে?
তুমি চলে যাওয়াতে বড্ড একা হয়ে গেছি, জানো। এখনও অনেক রাত অব্ধি জেগে থাকি, কিন্তু কেউ আর আড়াইটের সময়ে হঠাৎ পিং করে বলে না, 'আছিস?' কারোর কাছে আর নিজেকে তেমনভাবে মেলে ধরতে পারিনা, পারবও না হয়তো। সব জানতে তুমি। আমাকে পড়তে পারতে। অথচ, তাও আমাকে ভুল বুঝলে। চলে গেলে। হয়তো চলে যাওয়ার জন্যই এসেছিলে। বুঝিনি। বুঝিনি, জীবনে সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। ঠিক দুর্গাপুজোর এই চারদিনের মত। আসলে, বুঝিনি যে মায়া বাড়াতে নেই। একদিন সকালে উঠেই ঝটকা লাগবে, দেখব কিছু নেই। সব বুঝলে হয়তো তোমার প্রতি টানটা এভাবে থাকত না, বলো?
এখনো মুভ অন করতে পারিনি। পারবও না কোনোদিন হয়তো। কেউ তারপরে আসেওনি রাতবিরেতে 'আছিস?' বলে, হয়তো আসবেও না, বা আসলেও তোমার জায়গাটা কোনোদিন তার হবে না। মনের মধ্যেকার যে সুগন্ধী চন্দনকাঠের বাক্সর ডালাটা নিজের হাতে বন্ধ করে দিয়ে গেছো, সেটা আর খুলবে না কোনোদিন।
শুধু সেই বাক্সের ভিতরে কারা যেন ফিসফিস করে ওঠে,
- 'ইয়েলো কুর্তাটা পরতে পারিস তো মাঝেমধ্যে। বেশ মানায় তোকে।'
- 'তাই? বেশ... আর তুইও লাল কুর্তিটা পরতে পারিস কিন্তু কখনোসখনো। দেখতাম তোকে।'
শুধু স্মৃতিটুকুই রয়ে যায়। আর 'দূরত্ব বাড়ে, যোগাযোগ নিভে যায়।' :)
ভালো থেকো।
ইতি,
..........
উৎসবের মরশুম শেষ। চারিদিকে জুড়ে শুধু শ্মশানের বিষণ্ণতা। বেদনার্ত, ভারাক্রান্ত হৃদয়গুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে যে যার কাজে ফিরে যাওয়ার। সামনের সপ্তাহ থেকে আবার যে-কে-সেই। আবার সেই ব্যস্ত স্কেজ্যুউল, পড়াশোনার চাপ, অফিসে বসের ধাতানি....
জানো, বিষণ্ণতার কথা বলতেই তোমার মুখটা ভেসে ওঠে আমার কাছে, যে মুখটার দিকে এখন আর সোজাসুজি তাকাতে পারি না। 'ফেক'বুকের ফেক প্রোফাইল থেকেই দেখতে হয় তোমাকে। দেখি, তুমি ভালোই আছো। দিব্য কন্দর্পকান্তি এক যোগ্য প্রেমিকও জুটেছে তোমার। তুমি ভালোই আছো।
তুমি ভালো থাকলে আমিও থাকব, এমনটাই কথা ছিলো বোধহয়। কিন্তু, তেমনটা হল আর কই? তোমার পাশে এখনো যে অন্য কাউকে দেখতে পারি না! হয়তো পারবও না কোনোদিন। কিন্তু, এটাই যে নিয়তি, বলো?
তোমাকে লেখা একটা চিঠিতে একবার বুদ্ধদেব গুহর একটা উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলাম, 'আমার অশেষ আর্তি যেন তার সুখকে কখনো বিঘ্নিত না করে।', মনে আছে? হয়তো এটা হলেই ভালো হত, জানো। তবুও, পারি না। আমার মতো নাস্তিকও মাঝেমধ্যে প্রবল আস্তিক্যবাদী হয়ে উঠতে চায়, তুমি আবার ফিরে আসবে, এই আশায়।
তোমার মনে পড়ে, একসাথে ভোরের মহাত্মা গান্ধী রোড দিয়ে পথ হাঁটতাম আমরা? বৃষ্টি নামলেও আমি ইচ্ছে করে ছাতা বের করতাম না, তোমার সাথে এক ছাতায় হাঁটতে পারব বলে। কলেজ স্ট্রীট-এমজির বৃষ্টিকে সবাই ভয় পায়, কিন্তু ঈশ্বর জানেন, কীভাবে আমি চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করে থাকতাম সেই বৃষ্টির জন্য। 'ইজাজত' সিনেমার সেই বিখ্যাত গানের লাইনের মতই, আধা-ভিজে আধা-শুকনো আমরা গল্প করতে করতে এগিয়ে যেতাম কলেজের দিকে। আচ্ছা, তুমি এখনো সেভাবে বৃষ্টিতে ভেজো তোমার বর্তমান প্রেমিকের সঙ্গে?
তুমি চলে যাওয়াতে বড্ড একা হয়ে গেছি, জানো। এখনও অনেক রাত অব্ধি জেগে থাকি, কিন্তু কেউ আর আড়াইটের সময়ে হঠাৎ পিং করে বলে না, 'আছিস?' কারোর কাছে আর নিজেকে তেমনভাবে মেলে ধরতে পারিনা, পারবও না হয়তো। সব জানতে তুমি। আমাকে পড়তে পারতে। অথচ, তাও আমাকে ভুল বুঝলে। চলে গেলে। হয়তো চলে যাওয়ার জন্যই এসেছিলে। বুঝিনি। বুঝিনি, জীবনে সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। ঠিক দুর্গাপুজোর এই চারদিনের মত। আসলে, বুঝিনি যে মায়া বাড়াতে নেই। একদিন সকালে উঠেই ঝটকা লাগবে, দেখব কিছু নেই। সব বুঝলে হয়তো তোমার প্রতি টানটা এভাবে থাকত না, বলো?
এখনো মুভ অন করতে পারিনি। পারবও না কোনোদিন হয়তো। কেউ তারপরে আসেওনি রাতবিরেতে 'আছিস?' বলে, হয়তো আসবেও না, বা আসলেও তোমার জায়গাটা কোনোদিন তার হবে না। মনের মধ্যেকার যে সুগন্ধী চন্দনকাঠের বাক্সর ডালাটা নিজের হাতে বন্ধ করে দিয়ে গেছো, সেটা আর খুলবে না কোনোদিন।
শুধু সেই বাক্সের ভিতরে কারা যেন ফিসফিস করে ওঠে,
- 'ইয়েলো কুর্তাটা পরতে পারিস তো মাঝেমধ্যে। বেশ মানায় তোকে।'
- 'তাই? বেশ... আর তুইও লাল কুর্তিটা পরতে পারিস কিন্তু কখনোসখনো। দেখতাম তোকে।'
শুধু স্মৃতিটুকুই রয়ে যায়। আর 'দূরত্ব বাড়ে, যোগাযোগ নিভে যায়।' :)
ভালো থেকো।
ইতি,
..........
Comments
Post a Comment